আজকের মহতী সভার মান্যবর সভাপতি মহোদয়, প্রধান অতিথি মহোদয় এবং সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠনের সর্ব ভারতীয় স্তরের পদাধীকারিগণ, সমস্ত প্রাদেশিক পদাধিকারীগণ, সদস্যবৃন্দ এবং উপস্থিত সমস্ত সূধীজনকে প্রনাম জানিয়ে আমার সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করছি। আজ ২7 শে সেপ্টেম্বর 2024 আমাদের সংগঠনের গৌরবময় তৃতীয় স্থাপনা দিবস পালিত হচ্ছে। ইতিপূর্বে কয়েকটি সার্বজনীন সভা, সার্বজনীন গুগল সভা, কোর কমিটির আলোচনা ইত্যাদি ইত্যাদির মাধ্যমে এই সংগঠন নিরন্তর কাজ করে চলেছে। মনে হয়, এই প্রথম আমরা এতবড়ো একটা সমাবেশের সহভাগী হতে পেরেছি। তারজন্য মধ্যপ্রদেশ কমিটিকে অসংখ্য সাধুবাদ জানাই।
সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠন একটি অরাজনৈতিক সনাতনী হিন্দুত্ববাদী সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠন পঞ্জিকরণ করার সময়ে যাঁরা সাথে ছিলেন তাঁদের সবাইকে আজ পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আজ আমরা সবাই যাঁরা অহর্নিশি সহযাত্রী হয়ে কাজ করে চলেছি, সেই সমস্ত সমর্পিত যোদ্ধাদেরকে সাধুবাদ জানাই। শ্রী প্রসূন বিশ্বাস, শ্রী কল্যাণ কুমার রায়, শ্রীমতি পাঁপড়ি হালদার এবং আমি কৃষ্ণ হালদার এই মহতী উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তারপর অনেক সুহৃদ সূধীজনের সমন্বয়ে এই সংগঠন গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে আজকের এই বিশাল বটবৃক্ষের আকার ধারণ করেছে। এই তিন বছরের ক্ষুদ্র সময়ে নতুন পদাধিকারী সহ আপনাদের মতো অসংখ্য হিন্দুত্ববাদী মহান ব্যাক্তিগণের যোগদানে সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠনের পরিধি ভারত ছাড়াও বিদেশের মাটিতে সুকৃতি লাভ করেছে। এই পর্যন্ত আমাদের দ্বারা কৃত কিছু সফল কর্মের বর্ণনা করছি।
১) এই সংগঠন পঞ্জিকরণ করার পর আমরা দিল্লীর ছতরপুর – মন্দিরে গিয়ে পূজা দিয়ে সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে একটা রূপরেখা তৈরী করেছিলাম। তৎপশ্চাত দিল্লী প্রেস ক্লাবে আমাদের সংগঠনের আগমন বার্তা, পত্রকার সম্মেলন করে ভারতীয় জনগণকে পৌঁছে দিয়েছিলাম। সূচনা লগ্নে আমাদের সংগঠনের সাথে শ্রীমান শান্তনু ঠাকুর, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী; শ্রীমান জগন্নাথ সরকার, রাণাঘাট সাংসদ এবং শ্রীমান অসীম সরকার, কবি এবং বিধায়ক মহোদয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে উপস্থিত থেকে সংগঠনের প্রতি শুভকামনা এবং সাথে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। সময়ে সময়ে আমরা তাঁদের সহযোগ পেয়েছি।
২) আপনারা অবগত আছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে দূর্গা পূজার সময় মৌলবাদীদের চক্রান্তে, শ্রী হনুমানের পায়ের উপর কুরান শরিফ রেখে ভ্রম উৎপন্ন করে হিন্দুদের উপর দোষারোপ করে অমানবিক অত্যাচার, মন্দির ভাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন, হত্যা, লুন্ঠন ইত্যাদি শুরু হয়।ঐ ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনের ব্যানারে আমরা দিল্লীর জন্তর-মন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ধর্নায় বসেছিলাম। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমাদের এই আন্দোলনের প্রচার এবং প্রসার হয়েছিল। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস আগরতলা থেকে ভিসা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চৌমোহণী ইসকন মন্দির এবং অন্যান্য বিদ্ধস্থ দূর্গা মন্দির গিয়ে সেখানকার কমিটির সাথে মত বিনিময় করে এবং ভারত সরকারের সামনে ঐ তথ্য তুলে ধরার আশ্বাস দিয়ে, ভারতে ফিরে এসে দিল্লী প্রেস ক্লাবে প্রেস বার্তা করে বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দুর উপর অত্যাচারের করুণ কাহিনী তুলে ধরা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ও গৃহ মন্ত্রীর কার্যালয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে জ্ঞাপন দেওয়া হয়।
৩) দিল্লী পালম অঞ্চলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দুঃস্থদের মধ্যে কম্বল বিতরন করা হয়।
৪) রাজস্থানে উগ্রবাদী দুষ্কৃতকারী দ্বারা শ্রী কানাইয়া লালের নৃশংসতা পূর্বক হত্যার প্রতিবাদে অনেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে মিলে দিল্লীর মন্ডি হাউজ থেকে জন্তর মন্তর পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিল আমাদের এই সংগঠন।
৫) দিল্লীর কুতুব মিনারের কুতুব-উল-ইসলাম মসজিদ আসলে হিন্দু মন্দির যার বাস্তবিক নাম বিষ্ণু স্তম্ভ। এইস্থানের প্রতিটি দেওয়াল এবং স্তম্ভে হিন্দু স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। সনাতনী নাম বিষ্ণু স্তম্ভ পুনঃ নামকরণের দাবিতে সেখানে হনুমান চালিশা পাঠ করার কর্মসূচী ছিলো কিন্তু প্রশাসনের বাঁধার কারণে গেটের বাইরেই উক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
৬) পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে মতুয়া ভক্তদের বাস থামিয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা মারপিট, মহিলাদের গালি, খুনের হুমকি দেয়। যার প্রতিবাদে এই সংগঠন দিল্লীর জন্তর মন্তরে বিক্ষোভ এবং একদিনের ধর্ণা কর্মসূচী পালন করে। দিল্লীর বিভিন্ন চ্যানেল এবং পত্র পত্রিকা এই বিষয়ে প্রচার করেছিল।
৭) পূর্ণব্রহ্ম শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর এবং রাজর্ষি শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিকৃত ভাবে উচ্চারন করার কারণে পশ্চিমবাংলার মূখ্য মন্ত্রীর, প্রতি বিরোধ প্রদর্শন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
৮) ত্রিপুরায় কৃষ্ণপুত্র রাধে নামের এক ব্যক্তি শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর সম্পর্কে কূরুচীকর মন্তব্য করার প্রতিবাদে দিল্লী প্রেস ক্লাবে প্রেস বার্তা করে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানানো হয়েছিল।
৯) পূণ্য শ্রীধাম ওড়াকান্দি (বাংলাদেশ), ঠাকুর নগর (পশ্চিম বাংলা), দীনেশপুর (উত্তরাখণ্ড), এই তিন জায়গায় শ্রী বারুণী মেলা উপলক্ষে সেখানে ভক্তদের মাঝে সেবা কার্যক্রম করে শুদ্ধ জল, শরবত, বাতাসা, ফল ও মিষ্টি বিতরণ করে ভক্ত সেবা করা হয়েছিল।
১০) সনাতনী হিন্দুদের বহু প্রতীক্ষিত ভগবান শ্রীরামের জন্মস্থানে ভব্য শ্রীরাম মন্দির উদ্বোধনের সময় সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠনের ব্যানারে, শ্রী অযোধ্যা ধামে, শ্রীরাম-সীতা জুগল ফটো, রাম নামাঙ্কিত অঙ্গ বস্ত্র, কম্বল, চা-বিস্কুট ইত্যাদি, ওখানে আগত তীর্থ যাত্রী, ভক্ত ও সাধুদের মধ্যে বিতরন করা হয়েছিল।
১১) শারদীয় দুর্গাপূজায় দিল্লী, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবাংলার অনেক দূর্গাপূজা কমিটিকে বিশেষ পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল।
১২) দিল্লী গান্ধী পিস্ ফাউন্ডেশনে দেশের ৬৫ জন হিন্দু বাঙ্গালী বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও গুণীজনদের পুরষ্কার এবং সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়েছিল।
১৩) দিল্লীর বিভিন্ন মন্দিরে শিবরাত্রির সময় এবং শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে ইসকন মন্দিরকে এই সংগঠন সম্মানিত করেছে।
১৪) দক্ষিণ দিল্লীতে সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠন এক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল, যার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শ্রী রমেশ জী বিদূড়ী এবং হিন্দু ফ্রন্টের সভাপতি শ্রী জয় ভগবান জী গোয়েল। উনারা আমাদের সংগঠনের কার্যশৈলির পঞ্চমুখে প্রশংসা করেছিলেন।
১৫) ৪ঠা আগস্ট ২০২৪, কৃষ্ণনগর পশ্চিমবাংলায় শ্রী শ্রী শ্যামা মায়ের মন্দির উদ্বোধন ও মায়ের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠন থেকে আমি কৃষ্ণ হালদার, শ্রী অরবিন্দ বিশ্বাস, দিল্লী, শ্রী উত্তম কুমার বিশ্বাস, আলিগড়, শ্রী তাপস সেন, মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানা রাজ্য সভাপতি শ্রী শ্যামল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
১৬) এই বছরে মধ্যপ্রদেশে, বাঙালী বৈকল্পিক চিকিৎসকদের উপর প্রশাসনিক সঙ্কট দেখা দিলে আমাদের সংগঠন, প্রধানমন্ত্রী, গৃহমন্ত্রী কার্যালয়ে জ্ঞাপন দিয়ে বাঙালী ডাক্তারদের পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে চিকিৎসা করতে দেওয়ার সুপারিশ করে।
১৭) ৫ই আগস্ট 2024, বাংলাদেশের সেই সময়ের সরকার পতনের পর বাংলাদেশে সনাতনী হিন্দুদের মন্দির, ঘর, দোকান, কারখানা লুঠ ও অগ্নি সংযোগ, নারী হরণ, শ্লীলতাহানী, খুন ইত্যাদির প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে দিল্লির মন্ডি হাউজ (Mandi House) থেকে জন্তর মন্তর পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের মিছিলে, এই সংগঠন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০ই আগষ্ট ২০২৪ সালে কনস্টিটিউশন ক্লাব দিল্লীতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা, বিরোধ এবং ভারত সরকারের নিকট বাংলাদেশের হিন্দু নিরাপত্তার দাবী রেখে, সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করে। এই উপলক্ষে, আমি, কৃষ্ণ হালদার সহ আরো উপস্থিত ছিলেন শ্রী মৃণাল বৈরাগী, শ্রী কল্যাণ রায়, শ্রী প্রভঞ্জন বিশ্বাস, শ্রী প্রসূন বিশ্বাস, শ্রী অরবিন্দ বিশ্বাস, শ্রী পরিতোষ বিশ্বাস সহ আরো অনেক জন। প্রধান অতিথী ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দিল্লী প্রান্তের সভাপতি, শ্রীসুরেন্দ্র গুপ্তা।
১৮) ৯ই আগষ্ট ২০২৪ কোলকাতা আর,জি,কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে অমানবিক নির্যাতনের পর ধর্ষণ পূর্বক হত্যা করার প্রতিবাদে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড এবং সরকারের ব্যার্থতার জন্য রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবী রাখা হয়।
১৯) বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসা হিন্দুকে যখনই পশ্চিমবাংলার পুলিশ, জি.আর.পি অথবা বি.এস.এফ. (BSF) ধরে চালান করে এবং আমাদের কাছে খবর আসে, তাহলে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদের যতদূর সম্ভব আইনি সাহায্য করে মুক্ত করার জন্য।
২০) এই অল্প সময়ের সাংগঠনিক যাত্রায় আমরা দিল্লী, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবাংলা, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, ত্রিপুরা রাজ্যে সর্বভারতীয় হিন্দু বাঙালী সংগঠনের প্রাদেশিক কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছি। আরো অনেক প্রদেশে বিস্তারের সম্ভাবনা নিয়ে প্রয়াসরত আছি।
২১) সপ্তাহের প্রতি শনি অথবা রবিবারে রাত ৮-৩০ মিনিটে সার্বজনিক গুগল মিটিং করা, প্রতি বুধবার রাত ৮-৩০ মিনিটে বাংলার ঐতিহ্য বাহক সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরি সভার ব্যাবস্থা করা হয়।
সর্ব ভারতীয় হিন্দু বাঙ্গালী সংগঠন, এ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে যোজনা বদ্ধ ভাবে কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়েছে। কোনো আকস্মিক বিষয় সামনে এলে তারও মোকাবেলা অনেক ক্ষেত্রে করা হয়েছে। এই সমস্ত কাজের অতিরিক্ত আজকের এবং নিয়মিত সভা চলাকালীন সভায় যদি নতুন কোনো পদক্ষেপ, কোনো জরুরি পরামর্শ পাওয়া যায় এবং সেটা যদি সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় আসে, তাহলে সেই কর্মসূচী পালন করতে এই সংগঠন বদ্ধ পরিকর থাকবে। আজকের অধিবেশনে উপস্থিত সকল সনাতনী হিন্দু সূধীজনদের অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার সম্পাদকীয় বক্তব্য সমাপ্ত করলাম। ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। পুনরায় আজকের আয়োজনের জন্য মধ্যপ্রদেশ কমিটিকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সর্বোপরি এখানে উপস্থিত সকলে আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের এই বিশাল অধিবেশন সাফল্যমণ্ডিত করেছেন, তারজন্য অশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। জয় হোক সর্ব ভারতীয় হিন্দু বাঙ্গালী সংগঠনের, জয় হিন্দ, ভারত মাতার জয় জয়কার হোক।
বিনীত :- শ্রী কৃষ্ণ হালদার (সংস্থাপক এবং মহাসচিব,সর্ব ভারতীয় হিন্দু বাঙ্গালী সংগঠন, ভারত।)